মাথার কাছে মায়ের শাড়ি

মাথার কাছে মায়ের শাড়ি

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:০৬

কোন কারন ছিল বলে মনে হয়না.. 
কোথায় রাখি.. কোথায় রাখি... ভাবতে ভাবতে-ই ওটার স্থান হলো ওখানটায়..
এখন ভাবলে-ই কেমন একটা অনুভূতি হয়.. 

কি ভেবে যে বলেছিলাম, আম্মা শাড়িটা পাঠিয়ে দেবেন, জানালার পর্দা বানাবো ..
আম্মা-ও একজনকে দিয়ে শাড়িটা পাঠালেন আমার কাছে..
কোন প্রশ্ন-ই উঠলোনা কোথাও থেকে; যে , শাড়ি দিয়ে পর্দা বানাতে হবে কেন ?
দুনিয়ায় কি কাপড়ের অভাব পড়েছে..
আজব খেয়াল...

কিছু-ই বানানো হয়নি । সুন্দর করে ভাজ করে রুমের লকারে রাখলাম কয়েকদিন । মাঝে মধ্যেই বের করে দেখি । ভাজ সমান করে আবার রেখে দেই । 
অনেকদিন হয়ে যায়... 
বাড়ি গেলে আম্মা ঠিক-ই প্রশ্ন করেন, পর্দা বানাইছো ..? 
উত্তর , না.. 
ছোট ভাইটার টিটকারী, ওম্মা, ও শাড়ি নিলো ক্যান হঠাত.. ঘটনা কি.. ?
আমি হাসি..
কোন জটিল বা প্যাচানো চিন্তা আমার নেই.. 
জাষ্ট সরল হাসি..
ব্যাপারটায় যে একটা মা বিষয়ক আবেগের ব্যাপার আছে তাও মনে আসেনা..
ভাবি ও না কিছু..

ইন্টারমিডিয়েটে-ক্যামেষ্ট্রি সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেড়ি করে ফেলেছিলাম । বাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটার দুরে , একা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দেই.. দু’চারদিন ঝামেলা তো বেধেই যেতে পারে...আমি কেয়ার করিনা...

সেদিন বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা হয়হয় সময়ে বাড়িতে ফিরে দেখি আমাদের বাসায় আসপাশের বাসার লোকজনের ভীড় .. আমি কেন এত দেড়ী করলাম.. নিশ্চয়-ই খারাপ কিছু ঘটে গেছে.. এই টেনশন তখন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যদের মাঝেও .. আমি দুয়ারের কাছে এসেছি-তখন আম্মা ও হুড়মুড় করে বেরিয়েছেন মাত্র.. প্রতিবেশিরা এতক্ষন অভয় দিয়ে - সান্তনা দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন.. কিন্তু ... সন্ধ্যার অন্ধকারের আগমনে আম্মা আর থাকতে পারেন নি.. সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে খুজতে বেরুবেন... 

আরো হাজারো দৃশ্য মনে জমা থাকলে-ও , সেই সময়ের এই শাড়িটা পড়া আম্মাকেই মনে পড়ে কেন যেন... 

বাড়িজুড়ে টেনশনের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন বলে সেদিন আমি রেগে গেছিলাম... 
আম্মার ওপড় আমি রাগ করতেই পারি.. পারি সেটা প্রকাশ করতে-ও... 

একটু দেড়ি হয়েছে বলে এমন করে লোকজনকে জানিয়ে দিতে হবে সেটা..?

আম্মা পাল্টা ধমক দিছিলেন, তুই কি বুঝবি? এই লাইনের বাস এক্সিডেন্ট হয় প্রায় -ই..

হাহ.. এইচ.এস.সি র মাত্র কয়েকটা দিন পরে-ই এই ঢাকাতে এসে চোখের সামনে দেখেছি গাড়ির নিচে প্রানের হাহাকার..
আম্মা- আপনাকে বলিনি.. 

একাকী শহরে আরো কত কষ্টের মুখোমুখি হয়েছি...কতবার অসহ্য কষ্টে শহরের রাজপথগুলোতে হেটেছি ঘন্টার পর ঘন্টা... গ্রামে থাকতে যেমন কষ্টের সময়টা সাইকেল নিয়ে ভিনগায়ের অচেনা রাস্তায় বেড়িয়ে পড়তাম... 
.. .. .. সব যদি আপনাকে জানাই, তাহলে তো চলেনা.. ..

প্রথম যখন হলে উঠলাম, ছাদের কাছাকাছি ছিলাম । সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকতাম ছাদে গিয়ে.. বছর খানেক পরে রুম চেইন্জ করে নিচে চলে এলাম । ওই সময়ে ঘটে ব্যাপারটা । বিছানা-বইপত্র- আরো দু’চারটা আসবাব নতুন রুমে নিয়ে আসার সময়ে আম্মার শাড়িটা তড়িঘরি করে বালিসের কাভারের ভেতরে চালান করে দেই... 

বেশ কিছুদিন মনেই ছিলোনা । কাভারটা ধুয়ে দিতে গিয়ে একদিন চোখে পড়লো .. 

মজাই পেলাম সেদিন .. দারুন তো, দারুন জায়গায় স্থান হয়েছে শাড়ির ..
আমার অজান্তেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে... 
ঠিকাছে.. থাকুক ওখানে-ই :)

মন্তব্য ৬২ টি রেটিং +৩৮/-১

মন্তব্য (৬২)

No comments:

Post a Comment