সোহেলের টিউশানি .. ..
১৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:৪৪
ইশকুল লাইব্রেরীতে ইছুপ ছার সোহেলের মার্ক জিজ্ঞেস করতেছিলেন । এই প্রথমবার খাইরুলকে ডিঙিয়ে কেউ ফাষ্র্ট হলো ।
-বাংলা ?
-৮৬
- ম্যাথ ?
-৯৮
-হায়ার ম্যাথ ?
-৯৯
-ফিজিক্স ?
-৮৮ ..... ডট ডট....
পরদিন বিকেলে সোহেল ক্রিকেট খেলতে মাঠে যাইতেছিলো । রাস্তা পার হবার সময় দেখা ইছুপ ছারের সাথে ।
ছার বল্লেন ,
- সোহেল , আমার ছেলেটারে তুই একটু পড়া !
সোহেল ; "না ছার" , বলে নিজের হাত মুচড়াতে লাগলো "আমি কি পড়াইবো, আমি পড়াইতে পারিনা" ... লাজুক সোহেল সংকোচে অর্ধেক হয়ে গেলো ।
এটা কিভাবে সম্ভব, সে কাউকে পড়াবে ? কখন পড়াবে ? কিভাবে পড়াবে ? বিকেল বেলা হলো ধুন্দুমার ক্রিকেট খেলার টাইম । সন্ধ্যার পরে খেলার মাঠের সুখ-দু:খের স্মৃতিচারণ !! কোনদিন কাউকে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তার নাই ! তাছাড়া, ইছুপ ছারের ছেলে মেহদীর সাথেও তার কোনদিন তেমন কোন কথা হয় নাই । যেটুকুন হয়েছে, নিতান্তই চোখের পাতায় অস্বস্তি জাগানো দ্রুতরিদমের সালাম বিনিময় !
"পড়ানা একটু.. সম্মানী পাবি.. "
কান ঝাঁ করে ওঠে সোহেলের । মাটির দিকে তাকিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে রাস্তার খোয়া খুঁচাতে থাকে ! বুঝতেই পারেনি সেদিন সোহেল স্যারের কথা । "নাহ, ছার", বলে আবার ফ্যালফ্যালে হাসি হাসে বিব্রত সোহেল !
৫৫০০ টাকা কোচিং ফি আর অতিরিক্ত ছিলো ১৭০০ টাকা । একমাসের খরচ । গুনে গুনে বুঝিয়ে দিছিলো সোহেলের মা ।
সাকিব ভাই ই প্রথম একটা টিউশনি দিছিলেন । সোহেল জিজ্ঞেস করছিলো, সপ্তায় কয়দিন পড়াইতে হৈবে । ভ্রু কুঁচকে সাকিব ভাই জবাব দিছিলো, আটদিন । মাসে ৩২ দিন পড়িয়ে ৫০০ টাকা হাতে নেবার চাকুরী সোহেল এক সপ্তাহ পর ছেড়ে দিলো ! ওর প্রথম ছাত্র মুন্তাসির বেশ মন খারাপ করেই মেস থেকে ফিরে গেলো সেদিন...
ভার্সিটিতে ভর্তির পর সুদুর মুগদায় সোহেলের দ্বিতীয় টিউশানি ! চার চারে ষোল দিন পড়াতে হবে ক্লাশ ফাইভের ছাত্রকে । টাকা পাবে ২০০০ ! তিনদিনে সোহেলের খরচ হলো পঁচাত্তর টাকা । "স্যার, আম্মু হামিদ আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে বলেছে " - ছাত্রটি একথা বলার পরই সোহেলের মনে পড়লো, সে যেসব টেন্স আর পাষ্র্ট পার্টিসিপল শিখাইছিলো ছাত্ররে, তার কয়েকটাতে কোন পন্ডিতের কলমের খোচা , ভুল বলে চিহ্নিত করেছে...
এরপর বেশ কিছুদিন পুরোপুরি ছন্নছাড়া দিন কেটেছে সোহেলের । বাবা রুমমেটের ফোনে কল দিলেই জিজ্ঞেস করেন, "আব্বা টাকা লাগবে ? টাকা লাগলেই বলবি, সেলিমের কাছে পাঠিয়ে দেবো... " সোহেল বলে, "নাহ টাকা আছে"... তবুও কয়দিন পরপরই সেলিম চাচার বাসা থেকে ফোন পায় ও, "তোর আব্বা টাকা পাঠাইছে , নিয়া যা..."
ভোরে নাস্তা না করার অভ্যাসটা সোহেল রপ্ত করে এসময়ে । বিকেলটা এমনিতেই অভ্যাস হয়ে যায়... নাস্তা করার কথা মনেও পড়েনা..
বহুদিন পর, উত্তরা সাত নম্বরের একটা বাসার ঠিকানা হাতে পায় সোহেল । তিন দিন - ৩৫০০ টাকা । বেশ চমৎকার মাসখানেক পড়ায় সে । ছেলেটা মামার বাসায় থাকে । বাবা - মা চিটাগঙে.. কয়েকদিন পরে মামুন সোহেলের হাতে খুচরা মাসের ১২০০ টাকা দিয়ে বলে, স্যার, ব্যাচে পড়বো.. এভাবে পড়ে টাইম ম্যানেজ করা যাচ্ছেনা...
এবার ক্লাশমেট সুজিত নিয়ে গেলো সাথে করে । পুরোনো ঢাকার ঠাঁটারীবাজারে বাসা । এত চমৎকার .. খুব পছন্দ হলো সোহেলের । পড়ানো শুরুর সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রের পরীক্ষা শুরু । এবং সেই পরীক্ষায় ইংরেজী ও ম্যাথ, দুটোতেই খুব খারাপ ফলাফল । ছাত্রের বাবা আমিনুর রশীদ সোহেলকে বললেন, স্যার , আপনাকে আরেকটু কঠোর হতে হবে । আপনি না পারলে আমাকে বলবেন, পিটিয়ে চামড়া তুলে নেবো.. তাজ্জব সোহেল কয়েকদিন বেশ চোখ গরম রেখে পড়িয়ে গেলো ছাত্রকে .. স্ট্যান্ডার্ড ফোরের হিমেল ছেলেটা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদলো-ও কয়েকবার সোহেলের ধমক খেয়ে ! একমাস এক সপ্তাহ পরে একদিন হিমেলের মা বললেন, স্যার ছেলেটা পড়তে চায় না । পড়ে আবার কখনো ঠিক হয়ে গেলে আপনাকে খবর দেবো... বড়ৈ আফসুস হলো সোহেলের...
ইশকুল জীবনের খাইরুলের ফোন এলো একটা একদিন । একেবারে নাকের ডগায় একটা ছেলেকে পড়াতে হবে । সোহেল হেঁটে যায় হেঁটে আসে... রিক্সা ভাড়াও লাগেনা । কী মজার টিউশানি । মাত্র নয়দিন পড়িয়ে মাস পাড় করে ৩৫০০ টাকা হাতে নিয়ে বেশ পুলক অনুভব করে ও । ... এরমধ্যে এক বন্ধে বাড়ি থেকে ফিরে এসে কয়েকদিন ফোন অফ করে ঘোরাফেরার পর ছাত্রটি এসে হাজির হয় ওর রুমে । বেশ আলাপে ছেলেটা কত কথা বলে ... তারপর আরো বলে, সপ্তাহে তিনদিন পড়ে সে কিছুতেই সিলেবাস কাভার করতে পারছে না । তাই, রাহাত ভাইকে বলে অন্য ইউনির দু'জন টিচার রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওর বড় ভাইয়া । খুব বিনয়ী হয়ে বলে, "ছার, আমার তো মনে করেন, বাবার এত টাকাও নাই যে.. .. .. ."
বড়ৈ আমোদের ব্যাপার সোহেলের জন্য । সেদিন রাত্রেই একটা টিউশানি পেয়ে যায় ও... এবার গুলশান.. এতদিন ঢাকায় থেকেও এর আগে ও কখনো গুলশান যায় নি । এতদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংকের টিউশনি এটা । শেহাব ভাই বলেছেন, ছয় হাজারের কথাই বলছি সোহেল, তুমি ভেবে দেখো...
সোহেল ভাবাভাবি অনেক আগেই বাদ দিয়েছে ... টিউশনির প্রসংগ উঠলে সে একটা কথাই ভাবে...
ইছুপ ছারের কথা ...
-বাংলা ?
-৮৬
- ম্যাথ ?
-৯৮
-হায়ার ম্যাথ ?
-৯৯
-ফিজিক্স ?
-৮৮ ..... ডট ডট....
পরদিন বিকেলে সোহেল ক্রিকেট খেলতে মাঠে যাইতেছিলো । রাস্তা পার হবার সময় দেখা ইছুপ ছারের সাথে ।
ছার বল্লেন ,
- সোহেল , আমার ছেলেটারে তুই একটু পড়া !
সোহেল ; "না ছার" , বলে নিজের হাত মুচড়াতে লাগলো "আমি কি পড়াইবো, আমি পড়াইতে পারিনা" ... লাজুক সোহেল সংকোচে অর্ধেক হয়ে গেলো ।
এটা কিভাবে সম্ভব, সে কাউকে পড়াবে ? কখন পড়াবে ? কিভাবে পড়াবে ? বিকেল বেলা হলো ধুন্দুমার ক্রিকেট খেলার টাইম । সন্ধ্যার পরে খেলার মাঠের সুখ-দু:খের স্মৃতিচারণ !! কোনদিন কাউকে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তার নাই ! তাছাড়া, ইছুপ ছারের ছেলে মেহদীর সাথেও তার কোনদিন তেমন কোন কথা হয় নাই । যেটুকুন হয়েছে, নিতান্তই চোখের পাতায় অস্বস্তি জাগানো দ্রুতরিদমের সালাম বিনিময় !
"পড়ানা একটু.. সম্মানী পাবি.. "
কান ঝাঁ করে ওঠে সোহেলের । মাটির দিকে তাকিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে রাস্তার খোয়া খুঁচাতে থাকে ! বুঝতেই পারেনি সেদিন সোহেল স্যারের কথা । "নাহ, ছার", বলে আবার ফ্যালফ্যালে হাসি হাসে বিব্রত সোহেল !
৫৫০০ টাকা কোচিং ফি আর অতিরিক্ত ছিলো ১৭০০ টাকা । একমাসের খরচ । গুনে গুনে বুঝিয়ে দিছিলো সোহেলের মা ।
সাকিব ভাই ই প্রথম একটা টিউশনি দিছিলেন । সোহেল জিজ্ঞেস করছিলো, সপ্তায় কয়দিন পড়াইতে হৈবে । ভ্রু কুঁচকে সাকিব ভাই জবাব দিছিলো, আটদিন । মাসে ৩২ দিন পড়িয়ে ৫০০ টাকা হাতে নেবার চাকুরী সোহেল এক সপ্তাহ পর ছেড়ে দিলো ! ওর প্রথম ছাত্র মুন্তাসির বেশ মন খারাপ করেই মেস থেকে ফিরে গেলো সেদিন...
ভার্সিটিতে ভর্তির পর সুদুর মুগদায় সোহেলের দ্বিতীয় টিউশানি ! চার চারে ষোল দিন পড়াতে হবে ক্লাশ ফাইভের ছাত্রকে । টাকা পাবে ২০০০ ! তিনদিনে সোহেলের খরচ হলো পঁচাত্তর টাকা । "স্যার, আম্মু হামিদ আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে বলেছে " - ছাত্রটি একথা বলার পরই সোহেলের মনে পড়লো, সে যেসব টেন্স আর পাষ্র্ট পার্টিসিপল শিখাইছিলো ছাত্ররে, তার কয়েকটাতে কোন পন্ডিতের কলমের খোচা , ভুল বলে চিহ্নিত করেছে...
এরপর বেশ কিছুদিন পুরোপুরি ছন্নছাড়া দিন কেটেছে সোহেলের । বাবা রুমমেটের ফোনে কল দিলেই জিজ্ঞেস করেন, "আব্বা টাকা লাগবে ? টাকা লাগলেই বলবি, সেলিমের কাছে পাঠিয়ে দেবো... " সোহেল বলে, "নাহ টাকা আছে"... তবুও কয়দিন পরপরই সেলিম চাচার বাসা থেকে ফোন পায় ও, "তোর আব্বা টাকা পাঠাইছে , নিয়া যা..."
ভোরে নাস্তা না করার অভ্যাসটা সোহেল রপ্ত করে এসময়ে । বিকেলটা এমনিতেই অভ্যাস হয়ে যায়... নাস্তা করার কথা মনেও পড়েনা..
বহুদিন পর, উত্তরা সাত নম্বরের একটা বাসার ঠিকানা হাতে পায় সোহেল । তিন দিন - ৩৫০০ টাকা । বেশ চমৎকার মাসখানেক পড়ায় সে । ছেলেটা মামার বাসায় থাকে । বাবা - মা চিটাগঙে.. কয়েকদিন পরে মামুন সোহেলের হাতে খুচরা মাসের ১২০০ টাকা দিয়ে বলে, স্যার, ব্যাচে পড়বো.. এভাবে পড়ে টাইম ম্যানেজ করা যাচ্ছেনা...
এবার ক্লাশমেট সুজিত নিয়ে গেলো সাথে করে । পুরোনো ঢাকার ঠাঁটারীবাজারে বাসা । এত চমৎকার .. খুব পছন্দ হলো সোহেলের । পড়ানো শুরুর সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রের পরীক্ষা শুরু । এবং সেই পরীক্ষায় ইংরেজী ও ম্যাথ, দুটোতেই খুব খারাপ ফলাফল । ছাত্রের বাবা আমিনুর রশীদ সোহেলকে বললেন, স্যার , আপনাকে আরেকটু কঠোর হতে হবে । আপনি না পারলে আমাকে বলবেন, পিটিয়ে চামড়া তুলে নেবো.. তাজ্জব সোহেল কয়েকদিন বেশ চোখ গরম রেখে পড়িয়ে গেলো ছাত্রকে .. স্ট্যান্ডার্ড ফোরের হিমেল ছেলেটা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদলো-ও কয়েকবার সোহেলের ধমক খেয়ে ! একমাস এক সপ্তাহ পরে একদিন হিমেলের মা বললেন, স্যার ছেলেটা পড়তে চায় না । পড়ে আবার কখনো ঠিক হয়ে গেলে আপনাকে খবর দেবো... বড়ৈ আফসুস হলো সোহেলের...
ইশকুল জীবনের খাইরুলের ফোন এলো একটা একদিন । একেবারে নাকের ডগায় একটা ছেলেকে পড়াতে হবে । সোহেল হেঁটে যায় হেঁটে আসে... রিক্সা ভাড়াও লাগেনা । কী মজার টিউশানি । মাত্র নয়দিন পড়িয়ে মাস পাড় করে ৩৫০০ টাকা হাতে নিয়ে বেশ পুলক অনুভব করে ও । ... এরমধ্যে এক বন্ধে বাড়ি থেকে ফিরে এসে কয়েকদিন ফোন অফ করে ঘোরাফেরার পর ছাত্রটি এসে হাজির হয় ওর রুমে । বেশ আলাপে ছেলেটা কত কথা বলে ... তারপর আরো বলে, সপ্তাহে তিনদিন পড়ে সে কিছুতেই সিলেবাস কাভার করতে পারছে না । তাই, রাহাত ভাইকে বলে অন্য ইউনির দু'জন টিচার রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওর বড় ভাইয়া । খুব বিনয়ী হয়ে বলে, "ছার, আমার তো মনে করেন, বাবার এত টাকাও নাই যে.. .. .. ."
বড়ৈ আমোদের ব্যাপার সোহেলের জন্য । সেদিন রাত্রেই একটা টিউশানি পেয়ে যায় ও... এবার গুলশান.. এতদিন ঢাকায় থেকেও এর আগে ও কখনো গুলশান যায় নি । এতদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংকের টিউশনি এটা । শেহাব ভাই বলেছেন, ছয় হাজারের কথাই বলছি সোহেল, তুমি ভেবে দেখো...
সোহেল ভাবাভাবি অনেক আগেই বাদ দিয়েছে ... টিউশনির প্রসংগ উঠলে সে একটা কথাই ভাবে...
ইছুপ ছারের কথা ...
No comments:
Post a Comment