রো-জা-দা-র.... :-||

রো-জা-দা-র.... :-||

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:১৪



প্রথম যখন রোজা রাখার অভিজ্ঞতা শুরু হলো, তখন ছিলো আমার ক্রিকেটবেলা । দা' দিয়ে বানানো কাঠের এবরো-থেবরো ব্যাট আর ন্যাড়া টেনিস বল নিয়ে সারাদিন কেটে যেতো খুব দ্রুত ।

অনেক ছোট ছিলাম । ৮ কি ৯ বছর বয়স । শুরুটা পুরো ত্রিশ দিয়েই হয়েছিলো । মানে প্রথমবার থেকেই পূর্ণমাসব্যাপী সবগুলো রোজা রাখতে পেরেছিলাম B-) সমবয়সী আরো কয়েকজন থাকায় ব্যাপারটা ছিলো জেদের মত । কেউ রোজা ভাঙলো তো সে হেরে গেলো ...

সেহরী খাওয়াটা খুব ঝামেলার ব্যাপার ছিলো । সেহরী না খেয়ে যে দু'চার দিন রোজা রেখেছি, সেগুলো বেশি আরামের ছিলো :) সকালে ডাকতে ডাকতে আম্মার খবর হয়ে যেতো ... খাবার পরে নামাজ ...

কিছুটা বড় হবার পর, সকালে ছয় সাত জনের শুরু হতো দৌড় । ব্যায়াম করতে যাওয়া... হালকা চালে দুলতে দুলতে দৌড়িয়ে এয়াপোর্টের হলদে আলোর ল্যাম্পপোষ্টগুলো পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসা ... রোজার সময়েই কেন যেন এই অতিরিক্ত পরিশ্রম করার জোশটা সবার মধ্যে উদয় হতো .. যত্তসব!!

আলো ফুটলেই প্রথমে বাড়ির উঠোনে শুরু হতো ক্রিকেট ... ক্রিকেট শেষ হলে সাতচারা বা জামরুল গাছের হেলানো ডালটায় গিয়ে ঝাপাঝাপি... বিকেলে মাঠে গিয়ে বড়মাপের ম্যাচ জমতো B-)

প্রথমদিনের রোজাটা একটু কষ্টের ছিলো । বিকেলের দিকে বেশ কাহিল হয়ে পড়তো পোলাপান... দুয়েকদিন পার করতে পারলে আর সমস্যা হতো না...

একটা কথা মনে এলে এখনো হাসি পায়.. রোজার দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হতে থাকে, তখন মনে হতো ইফতারে কত না কি যেন খেতে পারবো.. গাছ থেকে পেয়ারা - কোথাও থেকে বড়ই - কোথাও থেকে জামরুল সংগ্রহ করে গুছিয়ে রাখছি.. সন্ধ্যায় খিচুরি কিংবা বুট বেগুনি পিয়াজু খাবার পর খেয়াল করে দেখি অতসব শখের সংগ্রহের প্রতি কোন আগ্রহ ই নেই... B:-/ 




কয়েকদিন আগেও রোজা হতো শীতকালে !! শেষদিকে ঝিঁঝিঁর ঝুম ঝুম ডাকাডাকিতে ঝালাপালা কান .. ইফতারির পর কয়েকজন মিলে শুরু হতো, ঝিঁঝি ধরার পালা... কয়েকটা পাটখড়ি (টাইঙ্গা) মুঠি করে একটা বাঁশের খুটিতে পেটানো হতো, সেই সাথে অদ্ভূত ডাকাডাকি, আয় ঝিঁঝিঁ আয়... তর মায় তরে থুইয়া ডাইল- চাইল ভাজা খায় .. পাটখড়ি পেটানোর শব্দে আকর্ষিত হয়ে ঝিঁঝি এসে গায়ে পড়তো.. তারপর ধরে ফেলাটা কোন সমস্যা ছিলো না :) 


ইফতারির প্রাথমিক ধাক্কাটা শেষ হলে নামাজের পরে শুরু হতো অন্য পর্ব :) বুট আর মুড়ি অথবা খোসাসুদ্ধ কাঁচা কলাই (খেসারি) সেদ্ধ.. আহা এই জিনিসটার কথা মনে পড়লে খুব আফসোস লাগে... দাঁত দিয়ে খুটে খোসা ছাড়িয়ে লবনাক্ত দানা চিবানো , দারুন মজার ছিলো.... 

গত অনেকগুলো বছর ধরেই রোজার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে... সত্যি-ই ব্যাপারটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং মোটামুটি কষ্টকর হয়ে পড়ছে । হলের ডাইনীঙে ভোররাত্রে সেহরী খাওয়ার চাইতে রুমে বসে বিস্কুট খেয়ে রোজা রাখা অনেক বরকতের ব্যাপার :-& এমনি স্বাভাবিক সময়েই তেলহীন-মশলাহীন ভেজে পোড়া পোড়া করে রাখা আঁশালো মুরগীর টুকরো মুখে রোচেনা, সেই জিনিস খেতে হয় ঘুমভাঙা ভোর রাতে... 

গতবারের আগেরবার আমরা তিনজন রুমে রান্না করেছিলাম.. ভালো কেটেছে ওই দিনগুলি.... প্রত্যেকটা দিন একই ম্যেনু- সিনিয়র ভাইয়াটা মাঝে মধ্যে অভিযোগ করার মৃদু চেষ্টা করলেও বিকল্পের অপ্রতুলতার কারনে মেনে নিতেন :) ঘুমানোর আগে আগে ভাত রান্না করে রাখতাম আর ডিম প্রথমে ফেঁটিয়ে ভেজে প্রচুর পিয়াজ আর অনেকখানি মরিচ হলুদ তেল দিয়ে আবার রান্না করতাম । ভাতের সাথে সেদ্ধ দেয়া আলুটা ভর্তা করে নিলেই হলো... খুবই মজা লাগতো নিজেদের অপটু হাতের এই চড়াইভাতি.. ডাইনিং রুমে খাওয়ার চেয়ে একশ গুন আরামের ব্যাপার ... :`> 

ইফতারি মোটামটি উইংএর কয়েকটা রুমের সবাই মিলে একসাথে হয়.. এটা নিয়ে সমস্যা নেই । বেশ জম্পেশ রেগুলারিটি মেইনটেইন হইতেসে...:P রমজানে ইফতারির একটা আকর্ষনীয় ব্যাপার হলো তিনটা ছাত্রসংগঠনের ইফতার মাহফিল । সবাই ভালো ই খাওয়ায়.. ওই তিনদিন বেশ উৎসবের মত একটা ব্যাপার ... :)

এবার কিভাবে কি হবে আমি এখনো ঠিক জানিনা... আমার রুমমেটের ভাবসাব দেখে মনে হয় কিছু একটা প্লান করে রেখেছে... :) ... ওয়েটাইতে থাকি.. দেখি কি বলে...

মন্তব্য ৭০ টি রেটিং +৩২/-৮

মন্তব্য (৭০) 

No comments:

Post a Comment